
আজ আমরা দেখে নেব রসগোল্লা বানানোর রেসিপি টি Rasgulla Recipe in Bengali। মিষ্টির দোকানের মতন রসগোল্লা কিভাবে বানানো যায় জেনে নেব সেই পদ্ধতিটি। আপনিও বাড়িতেই স্টেপ বাই স্টেপ রসগোল্লা বানানোর রেসিপি টি ফলো করে মিষ্টির দোকানের মতন সফট ও জুসি রসগোল্লা বানিয়ে নিতে পারেন। আমরা সবাই জানি যে রসগোল্লা একটি বাঙালি খাবার। তাই রসগোল্লা হয়তো বাংলাতেই আবিষ্কার হয়েছিল, কারণ বাংলার মানুষেরাই রসগোল্লা খেতে বেশি পছন্দ করে এবং অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রসগোল্লার প্রচলন বাংলাতেই সব থেকে বেশি। তবে আপনারা জানলে অবাক হবেন যে সবার প্রথম রসগোল্লা কোথায় তৈরী করা হয়েছিল বা কে রসগোল্লা আবিষ্কার করেন তা নিয়ে ঐতিহাসিক মতভেদ আছে। তবে এখনই আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করব না। এই লেখাটির একদম শেষে রসগোল্লার ইতিহাস বিস্তারিত আলোচনা থাকলো।
রসগোল্লা বানানোর রেসিপি
খাঁটি দুধের ছানাকে গোল গোল করে মিষ্টি শিরায় ডুবিয়ে রান্না করে তৈরি করা হয় রসগোল্লা। কিন্তু কালের বৈচিত্রের সাথে রসগোল্লার স্বাদেরও পরিবর্তন ঘটেছে, তাই এখন একটি বা দুটি নয় মিষ্টির দোকানে গেলে আমরা নানান রকম এবং নানান স্বাদের রসগোল্লা দেখতে পাই। কিন্তু আমি এখানে ঐতিহ্যবাহী এবং সবথেকে খাঁটি মিষ্টির প্রতীক হিসেবে সাদা রসগোল্লা বানানোর পদ্ধতি টি Rasgulla Recipe in Bengali বর্ণনা করলাম।
রসগোল্লা বানানোর উপকরণ
- ১ লিটার দুধ,
- ১চা চামচ সুজি,
- সামান্য ময়দা,
- ২ থেকে ৩ কাপ চিনি,
- ১ চামচ গোলাপ জল।
রসগোল্লা বানানোর পদ্ধতি
দেখে যতটা সহজ মনে হয় পারফেক্ট রসগোল্লা বানানো ঠিক ততটা সহজ নয়। কিন্তু আপনি যদি আমাদের দেয়া স্টেপগুলি হুবহু ফলো করেন তবে আমি নিশ্চিত আপনিও দোকানের মতন নরম ও তুলতুলের রসগোল্লা বানাতে সক্ষম হবেন। রসগোল্লা বানানোর পদ্ধতি টি কে আমরা কতগুলি ধাপে ভাগ করে নিয়েছি
- রসগোল্লার জন্য ছানা প্রস্তুতি,
- রসগোল্লার আঁকার দেয়,
- মিষ্টির শিরা প্রস্তুতি,
- রসগোলা রান্না করা,
- কিভাবে বুঝবেন রসগোল্লা বানানো শেষ ,
- রসগোল্লা শিরায় ডোবানো ।
রসগোল্লার জন্য ছানা প্রস্তুতি
প্রথমে একটি পাত্রে ১ লিটার পরিমান দুধ নিন এবং মাঝারি তাপে জ্বালাতে থাকুন। দুধ ভালো করে জ্বালিয়ে নিয়ে একটি কাপড় দিয়ে ভালো করে ছেকে নিন। খেয়াল রাখবেন কাপড়টি যত পাতলা ও সুতোর ফাঁকা গুলি যত সূক্ষ হবে তত ভালো হয়।
এবার ছেকে নেওয়া দুধ টাকে আবার জ্বলে বসিয়ে দিন এবং ক্রমাগত হাতা দিয়ে নাড়তে থাকুন। ক্রমাগত নাড়তে থাকার ফলে দুধের ওপরে ফেনা আসবে না এবং দুধ তলা থেকে পুড়ে উঠবেনা।
যখন দুধে ভালো মতন জ্বাল চলে আসবে তখন উনোনের আঁচ মিডিয়াম থেকে কমিয়ে লো করে দিন। এবং সাথে সাথে ১ থেকেও ২ চা চামচ লেবুর রস দিয়ে দিন। লেবুর রস দিয়ে নাড়তে থাকুন আর খেয়াল রাখুন দুধ ছানা পাকিয়ে আসছে কিনা। যদি ছানা তৈরী না হয় তবে আরও কিছুটা লেবুর রস দুধে যোগ করুন।এবার দুধে ছানা তৈরী হয়েগেলে উনোনের আঁচ একবারে বন্ধ করে দিন। দেখবেন ছানার ওপর হালকা সবুজ রঙের জল ভেসে উঠবে। এখন আগের মতন ঠিক একই কাপড় দিয়ে ছেঁকে ছানা টিকে আলাদা করে নিন।
এখন কাপড়এর মধ্যে থেকে ছানা টিকে একটি পুটুলি মতন করে জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। জলে ধুয়েনেওয়ার ফলে ছানার জল পুরোপুরি ভাবে ছানা থেকে বেরিয়ে যাবে সাথে সাথে ছানার মধ্যে থেকে লেবুর স্বাদটাও চলে যাবে।
এবার ভালো করে চিপে চিপে ছানার থেকে সমস্ত জল বের করে নিন। লক্ষ্য রাখবেন যতটা সম্বব জল বের করা যায় বের করে দিতে হবে। নয়তো ছানার মধ্যে জলীয় ভাব থেকে যাবে ফলে মিষ্টির শিরায় রসগোল্লা রান্নার সময় রসগোল্লা ভেঙে যেতে পারে।
আরও কিছুটা জল বের করে দেবার জন্য পুটুলি টাকে ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখুন আর নয়তো আধ ঘন্টা মতন সময় কোথও জুলিয়ে রাখুন। মনের রাখবেন ছানা টাকে আমাদের পুরোপুরি শুখিয়ে ফেললেও হবে না।
রসগোল্লার আঁকার দেওয়া
এবার প্রস্তুত করা ছানা র মধ্যে এক চামচ মতন সুজি মিশিয়ে মাখতে শুরু করুন। রসগোল্লা যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য অল্প করে ময়দা মিশিয়ে নিন এবং মাখতে থাকুন। হাতের তালু দিয়ে ভালো মতন চাপ দিয়ে ছানা মাখুন। মাখতে থাকার সময় যদি মনে হয় ছানা বাঁশি ঝুর ঝুরে হয়ে যাচ্ছে তবে অল্প করে জল ছিটিয়ে নিন। ছানা মাখার এই স্টেপ টি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপরে নির্ভর করবে আপনার রসগোল্লা কতটা নরম আর স্পঞ্জি হবে। ফুচকার আলু মাখাতো সবাই দেখেছেন, ঠিক একই ভাবে এই ছানা মাখতে হবে। মাখতে মাখতে যখন হাতে একটু তেল তেল অনুভব আসবে তখন বুঝবেন আপনার ছানা রসগোল্লা বানানোর জন্য প্রস্তুত।
এবার ছানার থেকে ছোটো ছোটো টুকরো নিয়ে দুই হাতের তালু দিয়ে একটু চেপে গোল গোল বলের আঁকার দিন। সমস্ত বলগুলিকেই একই মাপের বানানোর চেষ্টা করুন। যদি বলগুলির মধ্যে ছোটো ছোটো ফাটল আসে তবে ভয়ের কিছু নেই এটা নরমাল। বল বানানো হয়েগেলো একটি কাপড় দিয়ে সবগুলিকে ডেকে রাখুন যাতে তা শুকিয়ে ড্রাই হয়ে না যায়।
মিস্টির শিরা প্রস্তুতি
একটি বড়ো পাত্রে ২কাপ মতন চিনি নিন এবং তাতে ১ লিটার মতন জল দিয়ে গরম করতে বসান। এইক্ষেত্রে একটু বড়ো সাইজের পাত্র নেওয়ার চেষ্টা করুন কারণ এই পাত্রটিতেই রসগোল্লা রান্না করা হবে।চিনি গোলে যাওয়া পর্যন্ত জল গরমে বসিয়ে নাড়াতে থাকুন তবে জল ফোটানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এইপর্যায়ে আমরা চিনির রসে এক চামচ মতন দুধ দিয়ে দেবো ফলে। এই অবস্থায় র নাড়াচাড়া দেওয়া যাবে না। একটু সময় অপেক্ষা করলেই দেখবেন চিনির রসের ওপর সাদা সাদা কিছুর আস্তরণ পরে যাবে, যা চামচ দিয়ে তুলে ফেলে দিন।
এবার ২ কাপ মতন চিনির রস আলাদা করে সরিয়ে রাখুন যা আমাদের পরে কাজে লাগবে। পাত্রে থাকা বাকি রস টুকু একটু জ্বালিয়ে নিন। ব্যাস রসগোল্লা রান্নার জন্য শিরা তৈরী। তবে ওভেন বন্ধ করবেন না। চলে যাবো পরের ধাপে।
আরও পরুনঃ কলকাতা স্টাইল চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি,
বাড়িতে ভ্যানিলা কেক তৈরির রেসিপি
রসগোল্লা রান্না করা
তৈরী করে রাখা ছানার বল গুলিকে একে একে আলতো করে চিনির রসে ছেড়ে দিন। চিনির রসে বলগুলি ছাড়া হয়েগেলে পাত্রটিকে হালকা হালকা নাড়াতে থাকুন। ভুল করেও ছানার বল গুলিকে চামচ বা হাতা দিয়ে নাড়তে যাবেন না। এবার পাত্রটিকে ডাকা দিয়ে দিন এবং মিডিয়াম থেকে একটু বেশি আঁচে রান্না করতে থাকুন। এই অবস্থায় পাত্রটি নাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
৫ থেকে ৬ মিনিট রান্নার পর ডাকনা খুলে আগে থেকে তুলে রাখা চিনির রসের থেকে হাফ কাপ মতন শিরা রসগোল্লার সাথে যোগ করুন। এবং পাত্রটিকে আবারো সামান্য নাড়িয়ে নিয়ে ডাকা দিয়ে দিন।
৫মিনিট রান্না করার পর আবার একই পদ্ধতিতে হাফ কাপ শিরা মিশিয়ে দিন ও আরও ২থেকে ৩ মিনিটের জন্য রান্না করুন। এভাবে রান্নার ফলে দেখবেন ছানার বলগুলি আকারে বেশ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে।
কিভাবে বুঝবেন রসগোল্লা বানানো শেষ
রসগোল্লা ঠিক ভাবে বানানো হয়েছেকিনা সেটা বোঝার 2টি উপায় আছে
১ একটি পাত্রে জল নিয়ে একটা রসগোল্লা ছেড়ে দিলে যদি রসগোল্লাটি ডুবে যায় তবে বুঝবেন রসগোল্লা টি প্রস্তুত ।
২ রসগোল্লার সামান্য একটু অংশ আঙ্গুল দিয়ে চেপে ছেড়েদিন। যদি ছেড়েদেবার পর আগের অবস্থায় চলে আসে তবে বুঝবেন আপনার রসগোল্লা টি প্রস্তুত।
রসগোল্লা শিরায় ডোবানো
এবার আগে থেকে আলাদা করে রাখা সিরার বাকি অংশটা একটি বড়ো বাটিতে নিয়ে নিন, তাতে রান্না করা রসগোল্লা একটা একটা করে চামচ দিয়ে তুলে ছাড়া দিন। সবগুলো রসগোল্লা একই ভাবে শিরায় ডোবানো। ফ্লেবারের জন্য ওপর থেকে 1 চামচ গোলাপ জল ছড়িয়ে দিন। ব্যাস পরিবেশন করার জন্য একদম রেডি মিষ্টির দোকানের মতন নরম ও তুলতুলে রসগোল্লা।
History of Rasgulla Sweet
কোথায় প্রথম রসগোল্লা তৈরি হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যেও দ্বিমত আছে। তাদের অনেকেই মনে করেন রসগোল্লা সবার প্রথম উড়িষ্যায় তৈরি হয়েছিল। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরে ভগবান লক্ষ্মীকে ক্ষীর মোহন বা Khiramohana নামে যে প্রসাদ বা ভোগ দেয়া হয় তার থেকেই বর্তমান যুগের রসগোল্লার সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু আমরা এখন যে নরম স্পঞ্জি রসগোল্লা খেয়ে থাকি সেটা মূলত পশ্চিমবাংলাতেই সৃষ্টি হয়েছে। ১৮৬৮ সালে পশ্চিমবাংলার কলকাতাতে সর্বপ্রথম নবীনচন্দ্র দাস নামে এক ময়রা ছানা দিয়ে রসগোল্লা বানিয়েছিলেন যা কিনা আজও প্রচলিত আছে।